যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে রাশিয়া-চীন-ইরানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে - live tv online

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে রাশিয়া-চীন-ইরানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে

ওয়াশিংটন, ২২ আগস্ট - সবচেয়ে স্বচ্ছ এবং কার্যক্রর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেও ভোটারের মতামতের সঠিক প্রতিফলন ঘটে না বলে অভিযোগ। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ে বলে প্রশাসন থেকে নির্বাচন নিয়ে গবেষণারতরাও অভিযোগ করে আসছেন। বছর দেড়েক আগে থেকে রাশিয়ার সঙ্গে চীনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে। সামনের ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে এই দুটি দেশের সঙ্গে সর্বশেষ যুক্ত হলো ইরানেও নামও। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও এমন আশঙ্কা করছেন। অর্থাৎ রাশিয়া, চীন আর ইরানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে- এমন অভিমতের আলোকে ২১ আগস্ট চাঞ্চল্যকর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর এর ফলে সহজ-সরল ভোটারের মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে যে, তাহলে করোনার ভয়াবহতার মধ্যে কেন্দ্রে গিয়ে কিংবা ডাকযোগে আগাম ভোট দেয়ার প্রয়োজন কোথায়? ফলাফল তো ওই তিন দেশের চালাচালিতেই নির্ধারিত হবে। বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা-কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ২০২০ সালের নির্বাচনেও তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে অনলাইনে লাগাতার প্রচারণার পাশাপাশি অপছন্দের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারণা চালানো হবে। আর এমন অপপ্রচারণারের বাহন হিসেবে কখনও কখনও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের নামও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে ট্রাম্পের বিপক্ষের প্রার্থী হিলারি-বাইডেনের বিরুদ্ধে যেমনটি করা হয়। প্রপাগান্ডা এমন কৌশলে চালানো হয়, যখন সেটির সত্য বা মিথ্যা যাচাইয়ের অবকাশ থাকে না। অর্থাৎ একটি নির্জলা মিথ্যাকে শত-সহস্রভাবে অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। আন্তর্জাতিক গতি-প্রকৃতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট মহল গত বছর ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট এসেসমেন্ট শীর্ষক যে রিপোর্ট প্রকাশ করে সে অনুযায়ী নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই ঘটতে পারে সংঘবদ্ধ সেই অপপ্রচার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যে, সবচেয়ে বেশি তৎপর হবে রাশিয়া। তারা খুবই সংগঠিতভাবে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কূটকৌশল চালাবে। যেখানে নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশের বক্তব্য হিসেবে অভিহিত করা হবে সেই উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যাচারকে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার টার্গেটে ছিলেন যো বাইডেন। তাকে ধরাশায়ী করতে হিলারিকে ভিকটিম করা হয়। আর এবার বাইডেন নিজেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। সুতরাং রাশিয়ার জন্যে লাগাতার মিথ্যাচারের পথ সুগম হয়েছে। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে ডাকযোগে ভোটের বিরুদ্ধে সরব হন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প। ডাকযোগে ভোটের নামে ডেমোক্র্যাটরা তার ফলাফল হাইজ্যাক করবে বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প যদি গণনায় পরাজিত হন, তা হবে ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে-এমন কথাও জোরেশোরে উচ্চারণ করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেও ভোট জালিয়াতির অস্তিত্ব রয়েছে বলে আগে থেকেই সকলকে জানিয়ে রাখছেন। এ শঙ্কা থেকে ট্রাম্প ডাকবিভাগের নাজুক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে ফেডারেল তহবিল দিচ্ছেন না। এমনকি ডাক বিভাগ যাতে আগাম ব্যালট বিতরণে সক্ষম না হয় সে প্রক্রিয়াও অবলম্বন করেছেন ডাক বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাকে দিয়ে। এ নিয়ে তোলকালাম কাণ্ড চলছে। গ্রীষ্মের অবকাশে থাকা কংগ্রেসের সব সদস্যকে ক্যাপিটাল হিলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার। ইতোমধ্যেই সিনেটেও ডাক বিভাগের গতি-প্রকৃতির আলোকে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই প্রতিনিধি পরিষদেও ডেমোক্র্যাটরা ডাক বিভাগের অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে স্পিকার ন্যান্সি পেলসি জানিয়েছেন। ডাকযোগে আগাম ভোট বাড়লে ট্রাম্পের বিজয় সম্ভব হবে না বলে ট্রাম্প নিজেই মনে করছেন। এ জন্য ডাক বিভাগকে স্থবির করতে চাচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে সাধারণ ভোটারের সিংহভাগই আগাম ভোটে আগ্রহী অর্থাৎ তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহী ভোটের দিন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রে গিয়ে যারা ভোট দেবেন, সে সংখ্যা গভীর রাতের মধ্যেই জানা সম্ভব হবে। এরপর অপেক্ষার পালা ডাকযোগে আসা ভোটের গণনায়। আর সে সময়েই ট্রাম্পের মনগড়া অভিযোগে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য সকলকে প্রস্তুত থাকতে হবে যে, ৩ নভেম্বরের ব্যালট-গণনাই শেষ কথা নয়, এরপরেও কদিন অপেক্ষা করতে হবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে। ইউএস চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে অফিস অব দ্য ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সর শীর্ষ কর্মকর্তা উইলিয়াম ইভানিনা এমন মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল ফান্ডএ এলায়েন্স ফর দ্য সিকিউরিং ডেমক্র্যাসিতে উচ্চতর ডিগ্রিগ্রহণকারী ব্রেট শ্যাফার বলেন, এবারের নির্বাচনে অভ্যন্তরীণভাবেও নানা অপশক্তির প্রভাব ঘটতে পারে। এ ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার প্রয়োজন রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ইমেজ বিপন্ন হতে পারে এমন যে কোনো অপতৎপরতাকে ঠেকাতে হবে ঐক্যবদ্ধ থাকার মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার রাতে সমাপ্ত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির চার দিনের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান যেমন ছিল ইউনাইটিং আমেরিকা, ঠিক তেমনি দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যো বাইডেনও একই আহ্বান জানিয়েছেন আমেরিকানদের প্রতি। অন্ধকার যুগ থেকে আলোর পথে প্রবেশের এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে বলেছেন বাইডেন। চেম্বার অব কমার্সের ভার্চুয়াল মিটিংয়ে নির্বাচন নিয়ে কর্মরত সংস্থাগুলোর গভীর উদ্বেগের অন্তত ২০টি তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের অশুভ হস্তক্ষেপে ভোটারের মতামত ছিনতাইয়ের শঙ্কা প্রকাশিত হয়েছে। একে ঠেকানো সম্ভব না হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটাররা হতাশ হবেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে আমেরিকার মান-মর্যাদা পুনরুজ্জীবিত করার সংকল্পও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আরও পড়ুন: এফবিআই সিআইএ দুঁদে গোয়েন্দাদের সমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প উল্লেখ্য, এ মাসের শুরুতে কানেকটিকাটের ইউএস সিনেটর (ডেমোক্র্যাট) রিচার্ড ব্লুমেন্থাল ওয়াশিংটন পোস্টে এক উপ-সম্পাদকীয়তে স্পস্টভাবে উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন আক্রমণের মুখে/সতর্কবার্তা উপেক্ষার অবকাশ নেই। গত ৭ আগস্ট উইলিয়াম ইভানিনা প্রকাশ্যে বিবৃতি দেন যে, যো বাইডেনকে এন্টি-রাশিয়ান এস্টাব্লিশমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করছে রাশিয়া। অপরদিকে, চীন চাচ্ছে এমন একজনকে, যিনি হোয়াইট হাউজকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে না। চীন ট্রাম্পের পরাজয় দেখতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেন উইলিয়াম ইভানিনা। তবে চীন সরাসরি কোনো প্রার্থীর পক্ষে সরব হবে না। ইভানিনার ধারণা, ইরান কোনো প্রার্থীর পক্ষে না থেকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালাবে। সে আলোকে যতরকমের প্রপাগান্ডা দরকার তা অব্যাহত রাখবে ইরান। আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী হতে আগ্রহী অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের জয়-পরাজয় নিয়ে মহাব্যস্ত। তারা প্রকাশ্য, অপ্রকাশ্যভাবে নিজ নিজ মতামত, মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন ইভানিনা। ইভানিনার মতে রাশিয়া, চীন এবং ইরানের কূটকৌশল কোনোভাবেই গণতন্ত্রের জন্য সহায়ক নয়। তারা যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ট্রাম্পের মাধ্যমে হাস্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে চিহ্নিত করতে চাচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়া এবং প্রপাগান্ডা বিষয়ে ক্লিমসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যারেন লিনভিল বলেছেন, ইরান, চীন এবং রাশিয়াকে এক্ষেত্রে একইমাপের বিবেচনা করা উচিত হবে না। কারণ, চীনের অধিকাংশ অপপ্রচারণাই তাদের জন্যে আত্মরক্ষামূলক। তাদের সরকারের জন্য যেটি সহায়ক সে ধরনের মিথ্যাচারকে চীন প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কখনও কখনও নিজেদের পক্ষের লোকজনকে বিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়দা হাসিলের প্রয়াস চালায় চীন। অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতেও তারা সিদ্ধহস্ত। ইরানকে অনেক সময়েই রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেলেও কার্যত সেটি করা হয় নিজেদের স্বার্থেই। প্রকৃত অর্থে রাশিয়ার হাত ধরেই ইরান যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি-ধমকি থামিয়ে দিতে চায়-মন্তব্য লিনভিলের। ইতোমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণেও ইরানের অবস্থান আলোকপাত করা হয়। ইরানের ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচারণা চালানো হচ্ছে। রাশিয়ার পক্ষেও চলছে প্রচারণা। সূত্র : বিডি প্রতিদিন এন এইচ, ২২ আগস্ট

যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে রাশিয়া-চীন-ইরানের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে

No comments

Featured Post

Phirki Full Episode 2021

Phirki Full Episode 2021 Zee Bangla is an Indian broadcast channel for general entertainment in the Bengali language . As part of the Esse...

Powered by Blogger.